সৈয়দ আমির আলি

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা - ইংরেজ শাসন আমলে বাংলায় প্রতিরোধ, নবজাগরণ ও সংস্কার আন্দোলন | | NCTB BOOK

উনিশ শতকের শেষার্ধে বাংলার মুসলমান সমাজের নবজাগরণে যিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন তিনি হলেন সৈয়দ আমির আলি। তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার মাধ্যমে বাঙালি মুসলমানদের সামাজিক ও বৈষয়িক উন্নতি করতে চেয়েছেন । পাশাপাশি তিনি তাদের রাজনৈতিকভাবেও সচেতন করতে চেয়েছেন। সৈয়দ আমির আলি ১৮৪৯ সালে হুগলীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. ও বি.এল ডিগ্রি লাভ করেন । ১৮৭৩ সালে লন্ডনের লিংকল ইন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে দেশে ফেরেন। কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ১৮৯০ সালে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। ১৯০৯ সালে তিনি লন্ডনে প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য হন।

বাংলা তথা ভারতে তিনিই প্রথম মুসলমান নেতা, যিনি বিশ্বাস করতেন মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক রাজনৈতিক সংগঠন থাকা প্রয়োজন । তিনি বিশ্বাস করতেন, মুসলমানদের স্বার্থরক্ষা এবং তাদের দাবি-দাওয়ার প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নিজস্ব রাজনৈতিক সংগঠন থাকা প্রয়োজন । এই উদ্দেশে তিনি ১৮৭৭ সালে কোলকাতায় ‘সেন্ট্রাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন' নামে একটি সমিতি গঠন করেন । তিনি পত্র-পত্রিকায় শিক্ষা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলমানদের পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি করেন। ফলে ১৮৮৫ সালে সরকার মুসলমানদের শিক্ষার অগ্রগতির জন্য কতকগুলো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন । এ কারণে তিনি ১৮৮৪ সালে কোলকাতায় মাদ্রাসায় কলেজ পর্যায়ে ইংরেজি শিক্ষা এবং করাচিতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত করেন।

তাঁর বিখ্যাত দুইটি গ্রন্থ 'The Spirit of Islam' এবং 'A Short History of the Saracens'-এ ইসলাম ধর্মের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা ও ইসলামের অতীত গৌরবের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করতেন, আধুনিক ভারতের উন্নতির জন্য হিন্দু-মুসলামান উভয় সম্প্রদায়ের একযোগে কাজ করা প্রয়োজন । তিনি ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠাকে স্বাগত জানান। ১৯১২ সালে তিনি মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন । সৈয়দ আমির আলি নারী অধিকারের বিষয়েও সচেতন ছিলেন ।
 

Content added By
Promotion